স্বদেশ ডেস্ক:
বাংলাদেশ ৮২২ কোটি টাকার (এক ডলার ৮৫ টাকা) চেয়ে বেশি দামে কিনছে ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটের তিন কোটি ডোজ করোনা ভ্যাকসিন। বাংলাদেশ সরকার অবশ্য সরাসরি সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে এ টিকা কিনছে না। বাংলাদেশের বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিকেলস সিরাম থেকে এ টিকা কেনার চুক্তি করেছে। পরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের মাধ্যমে এ টিকা কিনে নেবে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস থেকে। এতে সরাসরি কেনার চেয়ে অনেক বেশি দাম পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সরকার বেক্সিমকো থেকে প্রতি ডোজ টিকা ৫ ডলারে কিনবে বলে চুক্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে। এখানে সিরাম ইনস্টিটিউট ও বেক্সিমকো ফার্মাসিউকেলসের ব্যবসা রয়েছে। ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার সম্ভাব্য টিকাটি অনুমতি নিয়ে ভারতে উৎপাদন করবে। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার যদি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য টিকা সরাসরি অ্যাস্ট্রাজেনেকা কোম্পানি কিনতে পারত তাহলে প্রতি ডোজ টিকা ২.১৫ ডলারে অথবা এর কাছাকাছি দামে কিনতে পারত বলে মনে করছেন বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্যবিদরা।
গতকাল শনিবার ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ান বেলজিয়ামের বাজেট স্টেট মিনিস্টার ইভা ডি ব্লিকারকে উদ্ধৃত করে করোনার টিকার দাম বিষয়ক একটি নিউজ প্রকাশ করেছে। ইভা ডি ব্লিকার করোনার বিভিন্ন কোম্পানির একটি গোপনীয় দাম উল্লেখ করেন তার টুইটে। যদিও কিছুক্ষণ পর তার টুইটটি তিনি মুছে দেন; কিন্তু তার ফলোয়াররা তার টুইটটির স্ক্রিনশট নিয়ে রাখেন এবং গার্ডিয়ানসহ বিভিন্ন গণমাধ্যম এ বিষয়ক রিপোর্টটি প্রকাশ করে।
টুইটে ইভা ডি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার প্রতি ডোজ টিকার দাম উল্লেখ করেছেন ১.৭৮ ইউরো (১.৬১ পাউন্ড)। জনজন অ্যান্ড জনসনের টিকা ৮.৫০ ডলার (৬.৩০ পাউন্ড), সানোফি-জিএসকের টিকা প্রতিটি ৭.৫৬ ইউরো, ফাইজার-বায়োএনটেক ১২ ইউরো, কিউরভ্যাক ১০ ইউরো এবং মডার্নার টিকা প্রতিটি ডোজ ১৮ ডলার। ইভা ডি ব্লিকার উল্লেখ করেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার প্রতি ডোজ ভ্যাকসিনের জন্য ১.৭৮ ইউরো (২.১৫ ডলার) দিতে সম্মত হয়েছে।
বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, বাংলাদেশ সিরামের করোনার টিকাপ্রাপ্তির চেষ্টা না করে সরাসরি অ্যাস্ট্রাজেনেকার সাথে চুক্তি করতে পারলে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হতে পারত। সিরাম-বেক্সিমকোর মাধ্যমে টিকা আনতে গিয়ে বাংলাদেশকে প্রতি ডোজ টিকায় বেশি ব্যয় করতে হচ্ছে ৩.২২ ডলার। টাকার অঙ্কে তা দাঁড়ায় ২৭৩.৭০ টাকা। এই হিসেবে তিন কোটি ডোজ টিকায় বাংলাদেশকে বেশি ব্যয় করতে হবে ৮২২ কোটি ১০ লাখ টাকার বেশি। সিরাম-বেক্সিমকো থেকে তিন কোটি ডোজ টিকা কিনতে বাংলাদেশকে ১৫ কোটি ডলার ব্যয় করতে হবে। ১৫ কোটি ডলারে বাংলাদেশী টাকায় হয় এক হাজার ২৭৫ কোটি টাকা। সরাসরি অ্যাস্ট্রাজেনেকা থেকে টিকা আনতে পারলে এই তিন কোটি ডোজে বাংলাদেশকে ব্যয় করতে হতো চার শ’ ৫৩ কোটি ৯০ লাখ টাকা অথবা এর কাছাকাছি।
বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, দরিদ্র দেশ হিসেবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দামে হয়তো বাংলাদেশকে প্রতিটি টিকা পরিশোধ করতে হতো না। আর কম দামে বাংলাদেশ পেতে পারত সরাসরি ওই কোম্পানির সাথে চুক্তি করতে পারলে।
বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্যবিদ ও বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা: মোজাহেরুল হক বলছেন, বাংলাদেশ সিরামের করোনা টিকাপ্রাপ্তির চেষ্টা না করে সরাসরি অ্যাস্ট্রাজেনেকার সাথে চুক্তি করতে পারলে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হতে পারত। সিরাম-বেক্সিমকোর মাধ্যমে টিকা আনতে গিয়ে বাংলাদেশকে প্রতি ডোজ টিকায় বেশি ব্যয় করতে হচ্ছে ২.৮৪ ডলার। টাকার অঙ্কে তা দাঁড়ায় ২৪১.৯৩ টাকা। এই হিসেবে তিন কোটি ডোজ টিকায় বাংলাদেশকে বেশি ব্যয় করতে হবে ৭২৫ কোটি ৭৮ লাখ টাকার বেশি। সিরাম-বেক্সিমকো থেকে তিন কোটি ডোজ টিকা কিনতে বাংলাদেশকে ১৫ কোটি ডলার ব্যয় করতে হবে। ১৫ কোটি ডলার বাংলাদেশী টাকায় হয় এক হাজার ২৭৫ কোটি টাকা। সরাসরি অ্যাস্ট্রাজেনেকা থেকে টিকা আনতে পারলে এই তিনকোটি ডোজে বাংলাদেশকে ব্যয় করতে হতো ৫৪৯ কোটি ২২ লাখ টাকা অথবা এর কাছাকাছি কোনো অঙ্ক পরিশোধ করতে হতো। অধ্যাপক মোজাহেরুল হক বলেন, দরিদ্র দেশ হিসেবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দামে হয়তো বাংলাদেশকে প্রতিটি টিকা পরিশোধ করতে হতো না। আর কম দামে বাংলাদেশ পেতে পারত সরাসরি ওই কোম্পানির সাথে চুক্তি করতে পারলে।
টিকা সংগ্রহ বিষয়ে অধ্যাপক মোজাহেরুল হক বলেন, প্রথম দিকে বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রাজেনেকার সাথে চুক্তি করতে পারলে লাভবান হতো। আমরা সে সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করিনি। তবে আমাদের এখনো সময় আছে অ্যাস্ট্রাজেনেকার সাথে চুক্তি করে কম দামে বাংলাদেশ টিকা নিয়ে আসার।